সীমান্তে বিজিবি ও সাধারণ মানুষের সাহসী ভূমিকা
১১ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৫ এএম
ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা তার স্বৈরশাসনামলে বাংলাদেশকে ভারতের উপনিবেশে পরিণত করেছিলেন। শুধু ক্ষমতায় থাকার জন্য এটা করেছিলেন। যেমনটি মীর জাফর ১৭৫৭ সালে যেমন স্বাধীনতা ইংরেজদের কাছে বিকিয়ে পুতুল রাজা হয়েছিলেন, তেমনি হাসিনাও ভারতের পুতুল রানী সেজেছিলেন। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে দেশের মানুষ শেখ হাসিনাকে উৎখাত করে দেশকে এক নতুন স্বাধীনতার স্বাদ এনে দিয়েছে। এই অভ্যুত্থানে শুধু তার পতন হয়নি ভারতের আধিপত্যবাদেরও পতন হয়েছে। এখন দেশের মানুষ জীবন দিয়ে হলেও ভারতের আধিপত্যবাদ রুখে দিতে প্রস্তুত। তাদের এই শক্তি যুগিয়েছে ভারতের চোখে চোখ রেখে তার যেকোনো অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকারের কথা বলা। সাম্প্রতিক দুটি ঘটনায় এর প্রমাণ পাওয়া যায়। গত সপ্তাহে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ঝিনাইদহের সীমান্তে ভারতের দখলে থাকা কোদলা নদীর প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকা উদ্ধার করেছে। যে নদীতে বাংলাদেশীরা কখনো নামতে পারত না, সেখানে এখন তারা মাছ ধরছে, গোসল করছে। অন্যদিকে, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) নওগাঁ সীমান্তে অন্যায়ভাবে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করতে গেলে বিজিবি বাধা দিয়ে তা বন্ধ করে দেয়। শুধু বিজিবি নয়, তাদের সাথে শত শত বাংলাদেশী যোগ দিয়ে বিএসএফের বেড়া নির্মাণ রুখে দিয়েছে। এই দুই ঘটনা থেকে এটাই প্রমাণিত হয়, এতদিন সীমান্তে ভারতের আগ্রাসন, খুন, নির্যাতন, নিপীড়নের বিরুদ্ধে নতুন বাংলাদেশের মানুষ দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তারা আপসহীন হয়ে উঠেছে। শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের স্বৈরশাসনামলে এমন দৃশ্য দেখা যায়নি। সীমান্তে বিএসএফ পাখির মতো বাংলাদেশীদের গুলি করে হত্যা করলেও শেখ হাসিনা তা নিয়ে প্রতিবাদ দূরে থাক, টুঁ শব্দও করেননি। উল্টো তার সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা ভারতের সাথে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের বয়ান হাজির করেছেন। সীমান্তে বিজিবিকে বিএসফের সাথে রাঁখি বন্ধন, মিষ্টি বিতরণসহ খোশগল্প করতে দেখা গেছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকেও ভারতের এমন অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে তেমন প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি।
ছাত্র-জনতা জীবন দিয়ে দুই দানব শেখ হাসিনা ও ভারতকে বিদায় করে দিয়েছে। হাসিনাকে যেমন পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে, তেমনি ভারতের দাদাগিরি রুখে দিয়েছে। তারা এখন দেশের সুরক্ষায় বিজিবির সহযোগী অতন্দ্র প্রহরীতে পরিণত হয়েছে। সীমান্তে তাদের দৃঢ়তা দেখে প্রতীয়মান হয়, স্বাধীনতা রক্ষায় তারা যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত। তারা ভারতের অন্যায় আচরণ আর বরদাশত করবে না এবং এক ইঞ্চি জায়গাও ছাড় দেবে না। দেশের জনগণ যখন আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়, তখন কোনো আগ্রাসী শক্তি তা প্রতিরোধ করতে পারে না। বিশ্বের সাম্প্রতিক ইতিহাসেও তার অনেক নজির রয়েছে। আফগানিস্তান থেকে রাতের আঁধারে যুক্তরাষ্ট্রকে পালিয়ে যেতে হয়েছে। ভারতের চারপাশে যেসব প্রতিবেশী রয়েছে, ভারতের সাথে তাদের আচরণ ও নীতি দেখলেই তা বোঝা যায়। ছোট্ট মালদ্বীপ ভারতকে আউট করে দিয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে, ভারতের অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে দেশগুলোর সরকার ও জনগণের কঠোর অবস্থান নেয়ার কারণে। আজকের বাংলাদেশের মানুষ যে ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে, তার আগাম বার্তা দিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শেখ হাসিনার পতনের পর তিনি প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেয়ার আগেই ফ্রান্স থেকে ভারতের একটি মিডিয়ার সাথে সাক্ষাৎকারে যা বলেছিলেন, তার মর্মার্থ ছিল, আগের মতো আর সবকিছু চলবে না। তাঁর এই বক্তব্যে দেশের মানুষ উজ্জীবিত হয়ে উঠে। অন্তর্বর্তী সরকার ভারতের প্রতিটি অন্যায় আচরণের জবাব দেয়ার নীতি অনুসরণ করে চলেছে। শেখ হাসিনার পতনের পর ভারত তাকে নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করে দিতে নানা ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত করেছে এবং এখনও করছে। সীমান্তে হত্যাকা- ও উৎপাত বাড়িয়ে দিয়েছে। সরকার ভারতের সকল ষড়যন্ত্র যেমন দৃঢ়তার সাথে মোকাবেলা করেছে, তেমনি তার অন্যায় আচরণেরও প্রতিবাদ করেছে। স্বারাষ্ট্র উপদেষ্টা বিজিবিকে নির্দেশ দিয়েছেন, সীমান্তে পিঠ দেখানো যাবে না। তার এই নির্দেশ বিজিবি প্রতিপালন করছে। দেশের মানুষ এখন এক নতুন বিজিবিকে দেখছে, যে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আপসহীন। বিজিবির পেছনে শক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে সাধারণ মানুষ। দেশের ১৮ কোটি মানুষ দেখিয়ে দিচ্ছে, তারা বিজিবির সাথে থেকে সীমান্ত রক্ষায় বদ্ধপরিকর।
রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের ভারতবিরোধী মনোভাব কতটুকু বুঝতে পারছে, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। দেশের মানুষ দেখেছে, পটপরিবর্তনের পর পরই বৃহৎ একটি রাজনৈতিক দল ভারতের অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে যেভাবে প্রতিবাদ করেছিল, এখন আর সেভাবে করছে না। তার এভাবে নীরব হয়ে যাওয়া মানুষ মোটেই পছন্দ করছে না। অবস্থাদৃষ্টে তাদের কাছে প্রতীয়মান হচ্ছে, দলটি এখন এই নীতি অবলম্বন করছে যে, ভারতকে অসন্তুষ্ট করা যাবে না। এটাও মনে করছে ভারতের সমর্থন ছাড়া যেন সে ক্ষমতায় যেতে পারবে না। অথচ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতন ও পলায়ন ভারত ঠেকাতে পারেনি। দলটি যদি জনগণের এই শক্তি ও পাল্স বুঝতে না পারে, তাহলে এর চেয়ে দুঃখজনক আর কিছুই হতে পারে না। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মধ্যেও ভারতের মনরক্ষার এক ধরনের মনোবৃত্তি পরিলক্ষিত হচ্ছে, যা জনগণের স্পিরিট ও আকাক্সক্ষার বিপরীত। বলার অপেক্ষা রাখে না, আগামী জাতীয় নির্বাচনে জনগণের ভোট দেয়ার অন্যতম লক্ষ্যই হবে, কোন দল ভারতের দাদাগিরি মিটিয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। দলীয় মার্কা বিজয় নিশ্চিত করতে পারবে না। সেই দিন চলে গেছে। মানুষ দেখবে, ভারতের অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে কোন দল কথা বলে, কোন দল তাকে তোয়াজ করে না। ভোট দিয়ে তাকেই ক্ষমতায় বসাবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে, জনগণ তাদের ছুঁড়ে ফেলে দেবে। বৃহৎ রাজনৈতিক দলসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে বুঝতে হবে, যে ভারত আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি, তার সাথে কোনো ধরনের আপস বা নতজানু আচরণ মানুষ মেনে নেবে না। ফলে সময় থাকতে ভারত প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান পরিস্কার করতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মেসির সঙ্গে প্রেমের গুঞ্জন উড়িয়ে দিলেন সেই সাংবাদিক
দেশের মানুষ হাসিনার ফাঁসি চায় :ভোলায় সারজিস আলম
জীবনযাত্রা ব্যয় আরো বাড়তে পারে
সাবেক ওসি শাহ আলমকে ধরতে সারা দেশে রেড অ্যালার্ট
মনে হচ্ছে পারমাণবিক বোমা ফেলা হয়েছে লস অ্যাঞ্জেলেসে
খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ভালোভাবেই হচ্ছে
চাল ও মুরগির বাজার অস্থিতিশীল
সামরিক খাতে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে চায় তুরস্ক
মানুষ জবাই করা আর হাত-পা ভেঙে দেয়ার নাম তাবলিগ নয় :জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ান
মুজিব কোট এখন ‘বাচ্চাদের পটি’
সীমান্তে প্রতিরোধ ব্যূহ
গণঅভ্যুত্থানে শহীদ আরও ৬ জনের লাশ ঢামেক মর্গে
মালয়েশিয়ায় এনআইডি ও স্মার্ট কার্ড সেবা কার্যক্রম চালু হচ্ছে
সাংবাদিক মিজানুর রহমান খানের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ শনিবার
ক্র্যাবের সভাপতি তমাল, সাধারণ সম্পাদক বাদশাহ্
মুকসুদপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির দু’গ্রুপে সংঘর্ষ : আহত ২৫
ভারতকে গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক সহযোগী মনে করে তালেবান
মাইনাস টু ফর্মুলার আশা কখনো পূরণ হবে না : আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী
গাজীপুর কারাগারে শ্রমিক লীগ নেতার মৃত্যু
ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে শীর্ষ পর্যায়ের দূত পাঠাবে চীন